ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট ::
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে গত শনিবার (১১ মে)। দেশব্যাপী এই সফরে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ‘হাইব্রিড’দের হাত থেকে দলকে বাঁচাতে তৃণমূল নেতাদের সতর্ক থাকারও বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাইব্রিডদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে হাইব্রিড এবং দলে অনুপ্রবেশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গত মাসে একাধিক সমাবেশে দেওয়া তার ভাষণে বলেছেন, এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। এরকম অনেক আলোচনা-সমালোচনার মুখে, বিশেষ করে ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাত হত্যার ঘটনায় জড়িত সাবেক জামায়াত নেতাকে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় হাইব্রিড ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে নেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা।

হাইব্রিডদের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘এদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতসহ অন্য কোনও দলের বিতর্কিত নেতারা কোথায় কোথায় অনুপ্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে এদের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করার কাজ চলবে। দলের গতি বৃদ্ধি করা হবে। আর চলবে শুদ্ধি অভিযান।’

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, হাইব্রিডরা আওয়ামী লীগে ভিড়তে শুরু করে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরপরই। প্রথমদিকে এ হার কম এবং সুবিধাবাদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর তা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের আগুন সন্ত্রাস, পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যাসহ আন্দোলনের নামে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত জামায়াত-বিএনপির অনেক নেতা আওয়ামী লীগে ভিড়তে শুরু করেন।

সূত্রগুলো বলছে, ২০১৬ সাল এমনকি ২০১৭ সালেও বিএনপি-জামায়াতের এসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের স্থনীয় পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। নানা অঘটনের সঙ্গে জড়িত থাকার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধও বাড়াতে থাকে তারা। এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে শুরু করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার এসব সুবিধাবাদী সম্পর্কে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপি-জামায়াত থেকে কাউকে দলে নিতে নিষেধও করেন। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি বিএনপি-জামায়াতের একশ্রেণির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে ভোলায় ছাত্রদল-যুবদলের এক হাজারের বেশি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরগুনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়ও যোগদান চলতেই থাকে। ২০১৭ সালে কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলায় চিঠি দিয়ে জানানো হয়, জামায়াত-বিএনপি বা তাদের কোনও আত্মীয় আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারবে না। সর্বশেষ ফেনীর ঘটনায় কঠোর অবস্থা নেয় ক্ষমতাসীন দল।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সুবিধাবাদী শ্রেণি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তাদের অপরাধ আড়াল করতে পারবে না। অনেকে মামলা ও শাস্তি থেকে বাঁচতে অপরাধ লুকিয়ে যোগ দিলেও তারা রেহাই পাবেন না। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। ইউনিয়ন পর্যন্ত এ সংগঠন বিস্তৃত। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে কেউ পরিচয় আড়াল করে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের চিহ্নিত করে বিতাড়ন করার কাজ অনানুষ্ঠানিকভাবে আগে থেকেই চলছে। আসন্ন সাংগঠনিক সফর এবং সম্মেলনে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব থাকবে।’

প্রসঙ্গত, দলকে গতিশীল এবং সাংগঠনিকভাবে মজবুত করতে শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে আটটি কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। গত ৪ মে থেকে এ সফর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে তা পেছানো হয়। পরে ১১ মে থেকে এই সফর শুরু হয়েছে।

পাঠকের মতামত: